বন্দুকভাঙায় ফের আতঙ্ক: সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে বিপর্যস্ত সাধারণ জনগণ

- Advertisement -

ডেস্ক রিপোর্টঃ

রাঙামাটির বন্দুকভাঙা এলাকা বর্তমানে ভয় আর আতঙ্কের অপর নাম। আঞ্চলিক দলগুলোর দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অস্থিরতা কিছুটা প্রশমিত করলেও, তাদের প্রস্থানের পরপরই বন্দুকভাঙা আবার পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে।

দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন জেএসএস ও ইউপিডিএফ এই এলাকাকে সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে রেখেছিল। গত ২ জানুয়ারি, রাঙামাটির বন্দুকভাঙায় সেনাবাহিনী অবস্থান নেয় এবং সন্ত্রাস দমনে অভিযান চালায়। অভিযানে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ, ধ্বংস করা হয় সন্ত্রাসীদের একাধিক ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেনাবাহিনীর কঠোর পদক্ষেপে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়, এবং স্থানীয় জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তবে গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টার দিকে সেনাবাহিনী তাদের অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করে মারিচুক এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পরই বন্দুকভাঙায় আবার শুরু হয় সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। সেনাদের প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বন্দুকভাঙা ও যমচুক এলাকায় শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি, যা এখনো চলমান ।

এলাকাবাসী সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে কিছুদিন নিরাপত্তা অনুভব করলেও, সেনারা চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় সাধারণ জনগণ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ভাষায়, “আমরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখে বসবাস করছি। শিশু, যুবক-যুবতীরা এখানে কেউ থাকতে পারে না, অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের শহরে পাঠিয়ে দিয়েছে।”

এদিকে ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই বন্দুকভাঙায় দুই সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে আবারও শুরু হয়েছে ভয়াবহ গোলাগুলি। স্থানীয় প্রতিনিধির বরাতে জানা যায়, দুই পক্ষের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তবে উভয় পক্ষই আহত-নিহতদের ব্যাপারে গোপনীয়তা বজায় রাখছে। এছাড়াও উক্ত ঘটনায় শুধু সন্ত্রাসীরাই নয়, প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালিরাও। স্থানীয় লোকজন জীবন বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। যারা এখনো এলাকায় রয়ে গেছে, তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। খাবার সংকটও প্রকট হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পরিবার থেকে খাবারও লুট করছে। সন্ত্রাসী কর্তৃক দখলকৃত বাড়ি ঘরের লোকজনদের নির্ধারিত স্থানের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। সব মিলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।

বন্দুকভাঙার জনগণের জন্য স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। সেনাবাহিনীর অভিযানের ফলে যে স্বস্তি এসেছিল, সেটি স্থায়ী করতে হলে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষের আকুতি একটাই—নিরাপত্তা এবং শান্তি। তারা চায় সরকার জরুরি ভিত্তিতে এব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, যাতে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয় এবং এলাকাটি পুনরায় শান্তিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত পোস্ট:

সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসীদের বাধার প্রতিবাদে হাজারো মানুষের মানববন্ধন: উন্নয়নকে থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা প্রতিহত করার অঙ্গীকার।

ডেস্ক রিপোর্টঃ ২৯ মে ২০২৫: সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হুমকি ও বাধার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদর। বৃহস্পতিবার...

পাহাড়কে বিছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করায় ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধের দাবিতে পিসিসিপি’র বিক্ষোভ

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধিঃ   সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে "তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব" দাবির...

কাপ্তাই সেনা জোন কর্তৃক দুস্থ ব্যক্তিবর্গের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান।

ডেস্ক রিপোর্টঃ   কাপ্তাই সেনা জোন (অটল ছাপ্পান্ন) এর উদ্যোগে জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার স্থিতিশীলতা শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে...

পাকিস্তানের সেনা ক্যাম্পে আঘাত হেনেছে ভারতের ড্রোন

ভারতে পাকিস্তানের হামলার পর পালটা হামলায় পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সম্পূর্ণ ধ্বংস করার দাবী করেছে নয়া দিল্লি। যদিও...