মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতের করণীয়সমূহ

- Advertisement -


পাতা -০২

মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতের করণীয়সমূহ

মহান আল্লাহ তা’আলার সৃষ্ট জগতে মানুষই যেহেতু একটি আত্মমর্যাদাশীল সৃষ্টি, সেহেতু মৃত্যুর পরও তার আত্মসম্মান অব্যাহত থাকে। মানুষের মৃত্যুই কিন্তু মানুষের জীবনের শেষ নয়। বরং মানুষের মৃত্যু হল প্রকৃতপক্ষে ইন্তেকাল। এর অর্থ স্থানান্তরিত হওয়া। অর্থাৎ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন ত্যাগ করে পরকালের স্থায়ী জীবনে পাড়ি দেয়া। সুতরাং মানুষ দুনিয়াতে জন্মলাভ করার পর যেভাবে বরণীয় হয়ে থাকে, ঠিক মৃত্যুর পরও তার জন্য কিছু করণীয় থাকে। তবে এ করণীয় কোন অমুসলিম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের সনাতনী পদ্ধতি কিংবা নিছক বাপ-দাদার রসম-রেওয়াজের আলোকে নয়। বরং এ করণীয়ও হতে হবে আল্লাহর রাসূল (ছ:)-এর প্রদর্শিত নিয়মে বা তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণে। কারণ তিনি আমাদের জীবিতদের জন্য যেমন সকল কাজের আদর্শ বা নমুনা, তেমনি মৃতের জন্য আমাদের সকল করণীয়ের ক্ষেত্রেও তিনি একমাত্র আদর্শ। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أَسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অবশ্য আল্লাহর রাসূলের জীবনের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব- ২১)
সুতরাং মৃতের জন্যও কি করতে হবে কিংবা কি করা যাবে না তা সবই আল্লাহর রাসূল (দ্বঃ)-ই বলে দিয়েছেন। তাই রাসূল (ছ:)-এর সুন্নাত বা কর্মনীতি অনুসারে মৃতের জন্য জীবিতের করণীয় কি তা পর্যায়ক্রমে নিম্নে পেশ করা হলো:

মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে কলমা পাঠ করা

হযরত আবু সাঈদ খুদরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছ:) বলেছেন:
لَقُنُوا مَوْتَكُمْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ
তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর তালক্বীন দাও। অর্থাৎ তাকে ‘কলামা’ পড়ে শোনাও। (মুসলিম- হা: নং ২০০১)
অবশ্য মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে বসে ‘কলমা ত্বায়্যিব’ ও ‘কলমা শাহাদাত’ পড়া প্রয়োজন। তবে এ কলমা পড়ার জন্য তাকে বাধ্য করা যাবে না। কারণ মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণার সময় হল বেশ কষ্টকর এবং ঐ সময় তাকে শয়তান থেকে বাঁচানোও বড় দায়। তাই এ ধরণের ব্যক্তিকে ‘কলমা’ পড়তে বাধ্য করা হলে সে যদি শয়তানের কবলে পড়ে জিদ করে বলে ফেলে ‘পড়ব না’ আর ঠিক ঐ মুহূর্তে যদি তার রূহও চলে যায় তাহলে (আল্লাহ না করুক) সে বেঈমান হয়ে মরার আশংকা প্রবল। অতএব ঐ ধরনের ব্যক্তির পাশে ‘কলমা’ পাঠ করা উত্তম তবে বাধ্য করা উচিত নয়।

কোন ব্যক্তির মৃত্যু সংবাদ শোনার সাথে সাথে দু’আ পড়া

মুসলিমের বর্ণনা সূত্রে হযরত উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (ছ:)-কে বলতে শুনেছি: কোন মুসলমানের উপর মুসীবত আসলে (মৃত্যু সংবাদ পৌঁছলে) সে যেন বলে:
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ اللَّهُمَّ أَجْرِنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفُ لِي خَيْراً منها
উচ্চারণ: ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজ্বি’ঊন। আল্লাহুম্মা আজ্বরিনী ফী মুদ্বীবাতী ওয়া আখলিফ লী খাইরান মিনহা।
অর্থ: আমরা আল্লারই জন্য এবং তারই নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমাকে আমার এই মুসীবতে ছওয়াব দান কর এবং এর বিনিময়ে তার চেয়েও উত্তম প্রতিদানের ব্যবস্থা কর।
রাসূলুল্লাহ (দ্বঃ) বলেছেন: ‘যে এভাবে দু’আ পড়বে তাকে আল্লাহ তা’আলা এর চেয়েও উত্তম প্রতিদান দিয়ে থাকেন।”
উক্ত হাদীছের বর্ণনাকারী হযরত উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, এরপর একদিন যখন আবু সালামা (আমার স্বামী) ইন্তেকাল করেন তখন মৃত্যু সংবাদ শুনলে যে দু’আ পড়তে রাসূলুল্লাহ (ছ:) শিক্ষা দিয়েছেন তা আমি পাঠ করলাম। আর মনে মনে ভাবলাম দু’আতে যে বলা হয়েছে “মুসীবতে যা হারানো হয়েছে তার চেয়েও উত্তম প্রতিদান দেয়া হবে” এখন আমার স্বামী আবু সালামার চেয়ে আর উত্তম কি হতে পারে? তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি হিজরত করে রাসূলুল্লাহ (ছ:)-এর নিকট পৌঁছেছিলেন। অতঃপর এক পর্যায়ে দেখা যায় মহান আল্লাহ তা’আলা (আমার স্বামী) আবু সালামার স্থলে আল্লাহর রাসূল (ছ:)-এর মত সর্বোত্তম স্বামীই আমাকে দান করেছেন।

এ প্রসঙ্গে উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, “আমার নিকট যখন রাসূলুল্লাহ (ছঃ)- এর সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে হাতেব ইবনে আবু বালতাকে পাঠানো হল তখন আমি বললাম, আমার একটি কন্যা আছে আর আমার জিদ বেশি। তখন রাসূলুল্লাহ বলে পাঠালেন, তাঁর কন্যার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে দু’আ করব যাতে তিনি তার কন্যার দুশ্চিন্তা থেকে তাকে মুক্তি দেন। আর তার ব্যাপারে দু’আ করব যেন আল্লাহ তার জিদ দূর করে দেন।” (হা: নং ২০০২-৫)
হযরত উম্মু সালামা (রাঃ) ভেবেছিলেন তাঁর স্বামী (আবু সালামা) ইন্তেকালের পর আল্লাহর কাছে তার চেয়ে উত্তম আর কি থাকতে পারে! কিন্তু ঘটনাক্রমে দেখা যায় আল্লাহর কাছে উত্তমের চেয়েও উত্তম বিদ্যমান।

মৃত্যু শোকের আঘাতের শুরুতেই ধৈর্য ধারণ করা

হযরত ছাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (ছ:) বলেছেন:
الصَّبْرُ عندَ الصَّدْمَة الأولى
বিপদের প্রথম আঘাতেই ধৈর্য ধারণ করা হল প্রকৃত ধৈর্য বা ছবর। (বুখারী হা: নং ১২১৭, মুসলিম ২০১৫)
বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনা সূত্রে হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “একবার রাসূলুল্লাহ (ছ:) এক মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ঐ মহিলা তার পুত্রের মৃত্যু শোকে কাঁদছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছ:) তাকে বললেন: আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। মহিলাটি বললেন, আপনি তো আমার মত মুসীবতে পড়েন নি। যখন রাসূলুল্লাহ (দ্বঃ) চলে গেলেন, কেউ তাকে বলল, তিনি তো আল্লাহর রাসূল (ছ:)। এ কথা শুনে মহিলার অবস্থা তো মৃতবৎ (আমি কাকে কি বললাম!)। সে সরাসরি রাসূলুল্লাহ (ছ:)- এর দরজায় এসে দেখল তাঁর দরজায় কোন দ্বাররক্ষী নেই। সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনাকে চিনতে পারি নি। রাসূলুল্লাহ (ছ:) বললেন: প্রকৃত ছবর হল মুসীবতে প্রথম আঘাতের সময় ছবর করা। (বুখারী- ১২০০, মুসলিম হা: নং ১২১৬)

আগের পাতা: ০১ | পরবর্তী পাতা: ০৩

2 মন্তব্য:

মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত পোস্ট:

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গাতে সেনাবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ প্রদান

ডেস্ক রিপোর্টঃ মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আভিযানিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সামাজিক উন্নয়নমূলক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে...

কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

ডেস্ক রিপোর্টঃ কাপ্তাই সেনা জোন (অটল ছাপ্পান্ন) এর উদ্যোগে জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার স্থিতিশীলতা শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে...

দীঘিনালা জোনের উদ্যোগে অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

ডেস্ক রিপোর্টঃ আজ, মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) খাগড়াছড়ি দীঘিনালায় পশ্চিম থানা বাজার এলাকায় শতাধিক শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র ও শীতের...

কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ত্রাণ সহায়তা প্রদান

ডেস্ক রিপোর্টঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে “সম্প্রীতি ও উন্নয়ন” এই মুলমন্ত্রকে বুকে ধারণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেনা সদস্যরা। এরই...