অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে সাংবাদিক রোজিনা গ্রেপ্তার

- Advertisement -


সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী। এতে দণ্ডবিধির দুটি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি চুরি এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের দুটি ধারায় রাষ্ট্রীয় গোপন নথি দখলে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে মন্ত্রণালয়ে যান রোজিনা। এরপর সরকারি নথি ‘চুরি’ করার অভিযোগে সেখানে তাকে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। আটক থাকার একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।

রোজিনার মুক্তির দাবিতে গতকাল রাতে গণমাধ্যমের শতাধিক কর্মী শাহবাগ থানায় জড়ো হন। হেনস্তার প্রতিবাদ, মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের পদত্যাগও দাবি করেছেন তারা।

রোজিনার ছোট বোন জুলি ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সোর্সের কাছ থেকে একটি ডকুমেন্ট নিয়েছিলেন তার বোন। এরপর স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করতে যান। সে সময় সচিব সেখানে নেই জানিয়ে দায়িত্বরত কনস্টেবল মিজান তাকে ভেতরে বসতে বলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ওই পুলিশ সদস্য ব্যাগ কেড়ে নিয়ে ভেতরে কাগজ ঢুকিয়ে বলতে থাকেন, আপনি স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে অনেক নিউজ করেছেন। একপর্যায়ে রোজিনার গায়েও হাত দেওয়ার চেষ্টা হয়। জুলি আরও দাবি করেন, তার বোনের ব্যাগে কাগজ ঢুকিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলামের ভাষ্য, রোজিনা ইসলাম সোমবার অনুমতি ছাড়াই স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলাম ভূঞার কক্ষে ঢোকেন। তখন পিএস সচিবের কক্ষে ছিলেন। কক্ষে কেউ না থাকার সুযোগ নিয়ে রোজিনা রাষ্ট্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ফাইলের ছবি তোলেন। আর কিছু ফাইল ব্যাগে লুকিয়ে ফেলেন। ওই সময় পিএসের কক্ষে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম। বিষয়টি দেখে ফেলায় রোজিনাকে বাধা দেন তিনি। এরপর অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে তর্ক ও ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় সচিবালয় থেকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। এখন পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেব।

এ ব্যাপারে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু আলোচিত প্রতিবেদন করেছেন রোজিনা। আমরা ধারণা করছি, এ কারণে তিনি আক্রোশের শিকার হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা আইনি পথেই মোকাবিলা করব।’

রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় এবং ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তি আর রাষ্ট্রের গোপন নথি নিজ দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে বলা আছে- নিষিদ্ধ স্থানে কেউ যায়, আর কোনো গোপন তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করে তাহলে তিনি অপরাধী হবেন। এসব ধারায় সর্বোচ্চ তিন বছর সাজার বিধান রয়েছে।

এদিকে, রোজিনাকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান। দীর্ঘসময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সমকালকে বলেন, রোজিনার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কোন আইনে কোন ধারায় তাকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হলো? কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে সুন্দর সমাধান করা যেত। হেনস্তার পর রাতে মামলার পর তাকে গ্রেপ্তারও করা হলো। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতা পরিপন্থি। এটা কাম্য নয়।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিবের অফিস স্টাফদের অসদাচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।

নিন্দা-বিবৃতি: রোজিনাকে হেনস্তার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তার দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন।

রোজিনার মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল টুইট বার্তায় রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

রোজিনার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে বলেছে, একজন সাংবাদিককে পেশাগত কাজের সময় এভাবে আটক করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত পোস্ট:

রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার।

ডেস্ক রিপোর্টঃ রাঙামাটির নানিয়ারচরে ২৪ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন নুরুল আলম গাজী হত্যা মামলার ১নং আসামী উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা নিখিল...

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গাতে সেনাবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ প্রদান

ডেস্ক রিপোর্টঃ মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আভিযানিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সামাজিক উন্নয়নমূলক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে...

কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

ডেস্ক রিপোর্টঃ কাপ্তাই সেনা জোন (অটল ছাপ্পান্ন) এর উদ্যোগে জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার স্থিতিশীলতা শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে...

দীঘিনালা জোনের উদ্যোগে অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

ডেস্ক রিপোর্টঃ আজ, মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) খাগড়াছড়ি দীঘিনালায় পশ্চিম থানা বাজার এলাকায় শতাধিক শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র ও শীতের...