মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদের করণীয় : জীবন ও মৃত্যুর পরিচয়

- Advertisement -


পাতা: ০১

ভূমিকা

মৃত ব্যক্তির জন্যেও আমাদের কিছু করণীয় আছে যেভাবে জীবিতদের মধ্যে আমাদের পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। দায়িত্ব ও কর্তব্য যেমন শর’য়ী নীতি-নির্দেশিকার অধীনে, তেমনি আমাদের মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয়সমূহও শর’য়ী নীতি-নির্দেশের বহির্ভূত নয়। তাই মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয়সমূহ কেউ নিজের ইচ্ছামত কিংবা গতানুগতিক প্রচলিত নিয়মে পালন করার কোন সুযোগ নেই। বরং তাও করতে হবে শর’য়ী নিয়ম-নীতির অনুসরণ ও অনুকরণে।

এক্ষেত্রে সহজলভ্য ও সহজবোধ্য কোন বই আমাদের হাতের নাগালে থাকলে মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদের করণীয়সমূহ কি তা সহজে জানা ও মানা যায়। আমরা না জানার কারণেই উক্ত করণীয়সমূহ পালন করতে পারি না। তাই
ইসলামী শর’য়ীতে কোন কিছু মানার আগে তা ভাল করে জানার জন্য তাকীদ দেয়া হয়েছে। আমরা উক্ত করণীয়সমূহ জানি না বলেই এমন এমন কাজগুলো করে থাকি যা মূলত শর’য়ীয়ত সম্মত নয়। যার ফলে আমাদের নষ্ট হয় শ্রম,
অপচয় হয় অর্থ, আর ব্যর্থ হয় শক্তি-সামর্থ। অথচ মুমেনের কোন কাজই বিফল হওয়ার কথা নয়। হয় তার ফল দুনিয়াতে পাবে, না হয় জমা হবে তার আখিরাতের হিসাবে।

আমরা না জানার কারণে মৃত ব্যক্তির জন্য গতানুগতিক ও প্রচলিত নিয়মে যেসব কাজ করি তন্মধ্যে এমন কিছু কাজও আছে যা সম্পূর্ণ বিদা’ত ও নাজায়েয। অথচ তা আমরা করে থাকি ছওয়াবের নিয়্যতেই। কিন্তু প্রকারান্তরে আমরা করছি গুনাহ। তাই সাবলিল ও সহজ বোধ্য করে রচনা করার চেষ্টা করেছি ‘মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদের করণীয়সমূহ’ নামে এই বইটি।

এই বই পড়ে কেউ যদি তার অজানাকে জানতে পারে এবং আমল শুদ্ধ করতে পারে, তাহলে মহান আল্লাহর কাছে আমরাও আমাদের শ্রমের উত্তম কিছু আশা করতে পারবো।
– লেখক: আবুল কালাম আযাদ

জীবন ও মৃত্যুর পরিচয়:

মানুষের জীবন ও মৃত্যু মূলত কোন সাধারণ প্রাণীর মত নয়। বরং আল্লাহ তা’আলা মানুষের জীবন ও মৃত্যুকে উদ্ভাবন করেছেন এক বিশেষ লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যে। তিনি বলেছেন:
.الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيُوةَ لِيَبْلُوكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً
তিনি সেই সত্তা যিনি (তোমাদের) মৃত্যু ও জীবন উদ্ভাবন করেছেন যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন- তোমাদের মধ্যে আমল বা কর্মের দিক থেকে উত্তম কে হতে পারে। (সূরা মূলক-২)
তিনি আরো বলেছেন:
لُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَنَبْلُوكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। (দুনিয়ায়) তোমাদের কাউকে ভাল আর কাউকে মন্দ অবস্থায় রেখে পরীক্ষা করছি। শেষ পর্যন্ত তোমরা সবাই আমাদের দিকে ফিরে আসবে। (সূরা আম্বিয়া-৩৫) মানুষকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পর্যায় শেষে যখন জীবন দিয়ে একদিন দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেন, তখন তাকে এ কথাও বলে দেয়া হয়:
ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُونَ، ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ
(এ জীবন লাভ করার) পর তোমাদেরকে অবশ্যই একদিন মরতে হবে এবং পরে কিয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে। (সূরা মুমিনুন-১৫-১৬) মানুষ জীবন লাভ করার তার পর মৃত্যুর সময়কে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوْتَ إِلا بِإِذْنِ اللَّهِ كَتَبًا مُّؤَجَّلاً
কোন প্রাণীই আল্লাহর হুকুম না হলে মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় সুনির্দিষ্ট ভাবে লিখিত রয়েছে। (সূরা আলি ‘ইমরান-১৪৫)
তিনি আরো বলেছেন:
وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا
যখন (কারো) জীবনের নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে আসে তখন আল্লাহ আর কাউকে তার সময় পিছিয়ে দেন না। (সূরা মুনাফিকুন- ১১)
এ মৃত্যু থেকে কোন মানুষের রেহাই নেই। কেউ পালিয়ে বাঁচতে চাইলেও বাঁচতে পারবে না। যে যেখানে থাকুক না কেন মৃত্যু তাকে পাবেই। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
قُلْ لَنْ يَنْفَعَكُمُ الْفِرَارُ إِنْ فَرَرْتُمْ مِنَ الْمَوْتِ
(হে নবী!) এ লোকাদেরকে বলে দাও, তোমরা যদি মৃত্যু হতে পালিয়ে বাঁচতে চাও, তাহলে এ পলায়ন তোমাদের জন্য কোন উপকার হবে না। (সূরা আহযাব-১৬)
তিনি আরো বলেছেন:
قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ۖ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
(হে নবী!) এদেরকে বল যে, মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বাঁচতে চাও তা তোমাদের সাক্ষাৎ করবেই। অতঃপর তোমরা সেই মহান সত্তার নিকট ফিরে আসবে, যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবই জানেন। আর তিনি তোমাদেরকে ঐ সমস্ত বিষয় জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করছিলে। (সূরা জুমু’আ-৮) তিনি আরো বলেছেন:
أَيْنَ مَا تَكُونُوا يُدْرِ كُكُمُ الْمَوْتُ وَلَو كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ
মৃত্যু সে তো তোমাদেরকে পাবেই তোমরা যত মজবুত দুর্গের ভিতরেও অবস্থান কর না কেন। (সূরা নিসা-৭৮)
জীবন মৃত্যুর মালিকই হলেন আল্লাহ তা’আলা। তিনি বলেছেন:
انَّا نَحْنُ نُحْى وَنُمِيْتُ وَالَيْنَا الْمَصِيرُ
আমরাই জীবন দান করি এবং আমরাই মৃত্যু দিয়ে থাকি। আর (তোমাদের) প্রত্যাবর্তনস্থল হল আমাদেরই নিকট। (সূরা ক্বাফ-৪৩)
এই জীবন ও মৃত্যুর পরই মানুষকে পুনঃরায় সৃষ্টি করা হবে যাতে তার ভালমন্দ ফয়সালা করা যায়। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
كَمَا بَدَا أَنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَعَلَيْنَ.
যেভাবে সর্ব প্রথম আমরা সৃষ্টির সূচনা করেছি অনুরূপভাবে আমরা তার পুনরাবৃত্তি করবো। এটা আমাদের ওয়াদা। এ ওয়াদা আমরা অবশ্যই পূরণ করব। (সূরা আম্বিয়া- ১০৪)

পরবর্তী পাতা ০২ | মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতের করণীয়সমূহ

১টি মন্তব্য

মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত পোস্ট:

সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসীদের বাধার প্রতিবাদে হাজারো মানুষের মানববন্ধন: উন্নয়নকে থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা প্রতিহত করার অঙ্গীকার।

ডেস্ক রিপোর্টঃ ২৯ মে ২০২৫: সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হুমকি ও বাধার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদর। বৃহস্পতিবার...

পাহাড়কে বিছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করায় ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধের দাবিতে পিসিসিপি’র বিক্ষোভ

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধিঃ   সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে "তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব" দাবির...

কাপ্তাই সেনা জোন কর্তৃক দুস্থ ব্যক্তিবর্গের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান।

ডেস্ক রিপোর্টঃ   কাপ্তাই সেনা জোন (অটল ছাপ্পান্ন) এর উদ্যোগে জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার স্থিতিশীলতা শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে...

পাকিস্তানের সেনা ক্যাম্পে আঘাত হেনেছে ভারতের ড্রোন

ভারতে পাকিস্তানের হামলার পর পালটা হামলায় পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সম্পূর্ণ ধ্বংস করার দাবী করেছে নয়া দিল্লি। যদিও...