ডেস্ক রিপোর্টঃ
চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন হাসপাতাল হলরুমে পাঠশালা (সিএইচটি রিসার্চ সেল) এর আয়োজনে “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী বিতর্ক ও বাস্তবতা” শীর্ষক সেমিনার এবং কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দিনব্যাপী এ আয়োজনে অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।
প্রথম পর্বের কুইজ প্রতিযোগিতা শুরু হয় সকাল ১১টায়, যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি শতাধিক শিক্ষার্থীগণ অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শান্তিচুক্তি, সংস্কৃতি ও সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয় পর্বে দুপুর ২টায় শুরু হয় মূল সেমিনার। পবিত্র আল-কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী প্রভাষক মো. আবু আইয়ুব আনসারী। এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপট, বাঙালি-উপজাতি সম্পর্ক, এবং শান্তিচুক্তির পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিম বিন মাহফুজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না জান্নাত প্রিয়া। তারা পাহাড়ি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বৈষম্যমূলক আচরণ এবং প্রশাসনিক অসামঞ্জস্যতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মুহাম্মদ কাউছার উল্লাহ, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে লেখক ও গভেষক অধ্যক্ষ এম এ আমিন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুরআনিক সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী হোছাইন, চট্টগ্রাম ক্যন্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, সাংবাদিক আবু বক্কর ছিদ্দিক। প্রভাষক মুজাহিদুল ইসলাম বাতেন, ইন্জিঃ আবুল কালাম এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের পরিচালক সাবেক ছাত্র নেতা তৌহিদুল ইসলাম। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রনেতা, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা নিজেদের বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে পারে না, বরং ‘অ-উপজাতি’ নামে পরিচিত। এটি বৈষম্যমূলক এবং একপাক্ষিক ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তির ফল, যেখানে বাঙালিদের জন্য ন্যায়সঙ্গত স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ২৪ জুলাইয়ের নতুন বাংলাদেশেও পাহাড়ের বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার।”
তিনি অভিযোগ করেন, শান্তিচুক্তির পর কিছু চাঁদাবাজি সংগঠন গড়ে উঠেছে যারা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। তার ভাষায়, “চুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তার এক-তৃতীয়াংশও জমা হয়নি। শান্তিচুক্তির পরও অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি।” তিনি আরও যোগ করেন, “আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন মূলত সম্ভব হয়েছে বাঙালিদের আগমনে। ষাট-সত্তরের দশকের অনুন্নত পাহাড় এখন বদলে গেছে। তাই একই রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে বাঙালিরা বৈষম্য মেনে নেবে না।”
উল্লেখ্য, পাঠশালা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষণা, নিয়মিত পাঠচক্র এবং নীতি-ভিত্তিক আলোচনার আয়োজন করা হয়। এটি মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের সাবেক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে পরিচালিত হয়। সিএইচটি রিসার্চ সেল পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক ইস্যু নিয়ে গবেষণামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।