মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদের করণীয় : কবর যিয়ারত ও বিধি নিষেধ

0 105

পাতা -০৯

মৃত ব্যক্তির কবর যিয়ারত করা

- Advertisement -

হযরত বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেছেন:
نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَة الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّ فِي زِيَارَتِهَا تَذكَرَةٌ
আমি তোমাদের (প্রথম প্রথম) কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (এখন অনুমতি দিচ্ছি) তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা কবর যিয়ারত করার মধ্যে (জীবনের) শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। (আবু দাউদ- হাঃ নং ৩২৩৫)
কবর যিয়ারতের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য যেমন দু’আ করা যায় তেমনি যিয়ারতকারী নিজেরও বেশ উপকার হয়। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেছেন:
كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ أَلَا فَزَرُوهَا ، فَإِنَّهَا تُرِقُ الْقَلْبَ وَتُدْمَعُ الْعَيْنَ وَتُذكِّرُ الآخِرَةَ وَلَا تَقُولُوا هُجْرًا
আমি তোমাদেরকে (প্রথম দিকে) কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, হ্যাঁ এখন থেকে তোমরা কবর যিয়ারত করো। কারণ তা অন্তরকে নরম করে দেয়, চোখে অশ্রু এনে দেয় এবং আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে (যিয়ারত করতে গিয়ে) অযথা বাতিল কোন কথা বলিও না। (হাকেম, হা: নং ১৩০৭৫, আহমদ- হা: নং ১৩২০৩) ‘অযথা বাতিল কথা’ বলতে কবর যিয়ারত করতে গিয়ে মৃত ব্যক্তির কাছে দু’আ চাওয়া, মৃত ব্যক্তি নেককার বা আওলিয়া-বুযুর্গ মনে হলে তাঁর অসীলা দিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি। এসব বাতিল কথা-বার্তা আল্লাহ্ তা’আলার ক্রোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
হযরত আবু সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ)
বলেছেন:
إنِّي نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَرُورُوهَا ، وَلَا تَقُولُوا مَا يُسْخِطُ الرب
আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম এখন থেকে তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা, তাতে শিক্ষণীয় ব্যাপার আছে। তবে তোমরা (যিয়ারতের সময়) এমন কোন কথা বলবে না যা প্রভুকে রাগান্বিত করবে। (হুহীহ্ ইবনে মাজাহ্ ১৫৮৯, ছহীহ্ জামে’ইছগীর ২৩৪০)
কবর যিয়ারত কতে গিয়ে ধৈর্যহারা না হলে এবং অযথা কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকতে পারলে মহিলারাও কবর যিয়ারত করতে পারে। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আবী মুলায়কাহ্ হতে বর্ণিত: “আয়েশা (রাঃ) একদিন কবরস্থান হতে ফিরে আসলেন। আমি তাঁকে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন। কোথা হতে আসলেন? তিনি বললেন: আবদুর রহমান ইবনে আবী বকরের কবর যিয়ারত হতে। তখন আমি তাঁকে বললাম, রাসূল (ছঃ) কি কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেন নি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পরে কিন্তু তিনি যিয়ারত করার অনুমতি দিয়েছেন।”
আয়েশা (রাঃ)-এর অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত:
أَنَّ رَسُولَ الله ﷺ رَخَّصَ في زيارة القبور
রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) কবর যিয়ারত করার অনুমুতি প্রদান করেছেন। (হাকেম- ৩৭৬, বায়হাক্বী-৮৭, দ্বিতীয়, বর্ণনা ইবনে মাজাহ্-১৫৭০)
তবে মহিলারা যেন অতি মাত্রায় কবর যিয়ারত না করে। অতিমাত্রায় কবর যিয়ারতকারী মহিলারা অভিসপ্ত। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ لَعَنَ زَوَّارَاتِ الْقُبُور
বেশি বেশি কবর যিয়ারতকারী মহিলাদেরকে আল্লাহর রাসূল (ছঃ) অভিসম্পাত করেছেন। (তিরমিজী হা: নং ১০৫৬)

কবর যিয়ারতের সঠিক নিয়ম:

মুসলিম ও নাসায়ীর বর্ণনা সূত্রে হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তাঁরা উভয়ের বর্ণনাগত কিছু পার্থক্যসহ আল্লাহর রাসূল (জ্বঃ)-এর শেখানো কবর যিয়ারতের নিয়ম হলো প্রথমে কবরস্থানে গিয়ে নিম্নোল্লিখিত সালাম ও দু’আ পাঠ করা:
السلام عَلَى أَهْلَ الدِّيارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللهُ المُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَأَحِقُونَ أَنْتُمْ لَنَا فَرَطٌ وَنَحْنُ لَكُمْ تَبَعُ أَسْأَلُ اللهُ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَة
অর্থ: কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ্ রহম করুন যারা আমাদের মধ্য থেকে আগে বিদায় নিয়েছে এবং যারা পিছনে বিদায় গ্রহণকারী সবার প্রতি। আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হবো, যখন আল্লাহ্ চান। তোমরা আমাদের অগ্রগামী আর আমরা তোমাদের পশ্চাৎগমণকারী। আল্লাহর দরবারে আমাদের ও তোমাদের জন্য শান্তি প্রার্থনা করছি। (হা: নং মুসলিম-২১২৮, ২১২৯, নাসায়ী- ২০৪০)
অত:পর মৃত ব্যক্তির জন্য তার মাগফিরাত কামনা করে দু’আ করা।
আল্লাহর রাসূল (ছঃ)-এর হাদীছের বর্ণনায় কবর যিয়ারতের জন্য প্রথমে দু’আসহ সালাম পাঠ করা তারপর দু’আ করা। এই দু’টি আমল ব্যতীত আর কোন কিছু পড়ার কথা বর্ণিত হয়নি। এ ছাড়া কবরস্থানে গিয়ে সূরা ফাতিহা, সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাছু, সূরা ফালাক্ব ও সূরা না-স অনুরূপভাবে সূরা ইয়াসীন বা সূরা ওয়াক্বি’আ ইত্যাদি সূরা কিংবা বিভিন্ন সূরার অংশ বিশেষ পাঠ করার পর দু’আ করা ভাল, একথা যারা বলেন, তাদের এ কথার কোন ভিত্তি নেই। যদি বলা হয তাতে অসুবিধা কী? অসুবিধা হল যা আল্লাহর রাসূল (ছঃ) করেন নি কিংবা তিনি করতে বলেন নি তা যেমন কোন দীনদারী নয় তেমনি তা কোন ইবাদতও নয়। অধিকন্তু কোন কবরে কিংবা কবরস্থানে যে কোন ধরনের কুরআন পড়া নাজায়েয। সুতরাং কবর যিয়ারত করার সময় আল্লাহর রাসূল (ছঃ)-এর শেখানো নিয়ম ব্যতীত যা কিছু অতিরিক্ত করা হবে তা হবে বিদা’ত।
উপরোল্লিখিত রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-এর হাদীছের বর্ণনা অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির জন্য ইছালে ছওয়াব বা ছওয়াব পৌঁছানোর নিয়মের সংক্ষিপ্তসার হলো- (১) মৃত ব্যক্তির জন্য খালেছুভাবে দু’আ করা, (২) মৃত ব্যক্তির জন্য দান-হৃদকা করা, (৩) মৃত ব্যক্তির জন্য জনকল্যাণমূলক কাজ করা যেমন- রাস্তা-ঘাট তৈরি করা, পানির জন্য গভীর কূপ, নলকূপ কিংবা ওয়াসার লাইন স্থাপন করা, মসজিদ মাদ্রাসা স্থাপন করা, শিক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, কোন রোগীর চিকিৎসা খরচ বহন করা, চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা, দুঃস্থ ইয়াতীমের পুনর্বাসনর করা ইত্যাদি। (৪) মৃত ব্যক্তির কোন ফরয রোযা কাযা থাকলে তার ফিদিয়া আদায় করা (৫) মৃত ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয থাকলে তার পক্ষ থেকে হজ্জ করা, (৬) মৃত ব্যক্তির কোন কর্জ থাকলে তার পক্ষ থেকে তা আদায় করা, (৭) মৃত ব্যক্তির কোন (শরী’য়ত সম্মত) মান্নত বাকি থাকলে তা পূর্ণ করা, (৮) মৃত ব্যক্তির জন্য কবর যিয়ারত করে দু’আ করা। এই হলো শরী’য়ত অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির জন্য ইছালে ছওয়াব বা ছওয়াব পৌঁছানোর নিয়ম। এসব নিয়ম উপেক্ষা করে যারা নিজের মত করে কিংবা নিজ নিজ এলাকায় প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ইছালে ছওয়াব বা মৃত ব্যক্তির জন্য ছওয়াব পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে তা শরী’য়ত সম্মত হবে না। আর যা শরী’য়ত সম্মত নয় তা আল্লাহ তা’আলার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না এটাই স্বাভাবিক।

আগের পাতা: ০৮ | পরবর্তী পাতা: ১০

- Advertisement -

Comments
Loading...