পাতা -০৬
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের সময় নিকট আত্মীয়রাই কবরে নামানো।
(সূত্র: হাকেম)
মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামানোর সময় আগে পায়ের দিক থেকে নামানো
হযরত আবু ইসহাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: “রাবেছ (রাঃ) অছীয়াত করে গিয়েছিলেন যে, তার জানাযার নামায যেন আবদুল্লাহ্ ইবনে ইয়াযীদ আদায় করেন। অতঃপর তিনি তাকে কবরে পায়ের দিক দিয়ে নামিয়ে বলেন: এটাই হচ্ছে সুন্নাত।” (আবু দাউদ- ৩২১১)
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় নিম্নোক্ত দু’আ পাঠ করা
بسم اللهِ عَلَى سُنَّةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ
আল্লাহর নামে এবং রাসূল (স্কঃ)-এর তরীকা মতেই রাখা হল। আবু দাউদ, হা: নং ৩২১৩)
অবশ্য وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ الله وَعَلَى سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ বলাও ছহীহ। (সুন: ইবনে মাজাহ)
মৃত ব্যক্তির কবরে মাটি দেয়ার সময় প্রথমে দু’হাত ভরে তিন আঁজলা মাটি দেয়া
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ صَلَّى على جَنَازَةٍ ثُمَّ أَتَى قَبْرَ الْمَيِّتِ فَحَتَى عليه من قبل رأسه ثلاثًا
রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) (কোন একজনের) জানাযার নামায পড়ালেন। অতঃপর মৃত ব্যক্তির কবরের নিকট এসে তার মাথার দিক হতে তার উপর তিন আঁজলা মাটি দিলেন। (হুহীহ্ ইবনে মাজাহ্-১৬৫)
মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার জন্য দু’আ করা
হযরত উছমান ইবনে আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন:
كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفَنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ وَقَالَ اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ فَإِنَّهُ الآن يُسْأَلُ .
নবী (ছঃ) যখন মৃত ব্যক্তির দাফন শেষ করতেন তখন তার কবরের কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়াতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য দু’আ করো এবং তাকে অবিচল থাকার জন্য দু’আ করো। কেননা, এখন তাকে প্রশ্ন করা হবে। (আবু দাউদ হা: নং ৩২২১)
বুখারীর বর্ণনা সূত্রে হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (দ্বঃ) বলেছেন: “বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার বন্ধু-বান্ধব যখন সেখান থেকে ফিরে চলে যায়, সে তখনও জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এমন সময় তার কাছে দু’জন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে বসিয়ে দেন। মুহাম্মদ (ছুঃ)-কে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন, এ লোকটি সম্পর্কে তুমি কি বলতে? তখন সে বলবে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার স্থানটি দেখে নাও। সেটি পরিবর্তন করে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতে একটি জায়গা প্রদান করেছেন। সে দুটিই এক সাথে দেখতে পাবে। কিন্তু কাফের মুনাফেক বলবে, অন্যান্য লোকেরা যা বলতো আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জানতেও চাওনি এবং বুঝ তেও চাওনি। এরপর লোহার একটি মুগুর দিয়ে উভয় কানে এমন জোরে আঘাত করা হবে যে, সে ভয়ানকভাবে চিৎকার করতে থাকবে। জ্বিন ও মানুষ ছাড়া নিকটবর্তী সবাই তার এ চিৎকার শুনতে পাবে। (হাঃ নং ১২৫০) বুখারীর অপর বর্ণনা সূত্রে হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বর্ণনা করেন, “একদিন রাসূলুল্লাহ (ছুঃ) বক্তৃতা করতে দাঁড়িয়ে কবরে মানুষকে যে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে সে সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন। তাঁর ঐ সম্পর্কে বর্ণনা দেয়ার সময় কবর আজাবের ভয়াবহতা শুনে মুসলমানগণ চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। (হাঃ নং ১২৮২)
বুখারীর আর এক বর্ণনা সূত্রে হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একজন ইয়াহুদী মহিলা তাঁর কাছে আগমন করলে (কথা প্রসঙ্গে) কবরের আজাবের কথা উল্লেখ করলো। সে বললো, আল্লাহ আপনাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করুন। পরে আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছুঃ)-কে কবরের আজাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, হ্যাঁ, কবরের আজাব সত্য। আয়েশা (রাঃ) বলেছেন: এরপর থেকে আমি রাসুলুল্লাহ (ছুঃ)-কে এমন কোন নামায পড়তে দেখি নি, যে নামাযের শেষে কবরের আজাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন নি। (হাঃ নং ১২৮১)
আগের পাতা: ০৫ | পরবর্তী পাতা: ০৭
[…] হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: أَنَّ النَّبِيُّ ﷺ قَرَأَ عَلَى الْجَنَازَة بفاتحة الكتاب নবী (ছ:) জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন। (তিরমিজী-হাঃ নং- ৯৬৫, ইবনে মাজাহ- হা: নং- ১৪৯৫) ইবনে মাজাহর অপর বর্ণনা সূত্রে হযরত উম্মু শারীক আল-আনছারিয়া (রাঃ) বলেন: أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ أَنْ نَّقْرَأَ عَلَى الجَنازَة بفاتحة الكتاب রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) আমাদেরকে জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (হা: নং-১৪৯৬) বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহর বর্ণনা সূত্রে হযরত উবাদাতা ইবনে সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ لأَصَلوةَ لِمَنْ لا يَقْرَأُ بِفاتحة الكتاب রাসূলুল্লাহ্ (ছুঃ) বলেছেন: যে লোক (নামাযে) সূরা ফাতিহা পড়ে না তার কোন নামাযই হয় না। (হা: নং- বুখারী- ৭১২, মুসলিম- ৭৭১, নাসায়ী- ৯১১, ইবনে মাজাহ্- ৮৩৭) বুখারীর বর্ণনা সূত্রে হযরত তালহা ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: صلَّيْتُ خَلَفَ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَى جَنَازَةِ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَقَالَ لِيَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ আমি ইবনে আব্বাসের পেছনে জানাযার নামায আদায় করেছি। তিনি (সূরা) ফাতিহা পাঠ করে জানাযার নামায আদায় করলেন এবং পরে বললেন, (আমি এরূপ এজন্যই করলাম) যাতে লোকেরা এটাই সুন্নাত (অর্থাৎ নিয়ম) বলে জানতে পারে। (হা: নং- ১২৪৭) নাসায়ী ও তিরমিজী বর্ণনা সূত্রে হযরত তালহা ইবনে আবদুল্লাহ্ (রাহঃ) বলেন: “আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর পেছনে জানাযার নামায পড়লাম। আমি তাঁকে (সূরা) ফাতিহা পাঠ করতে শুনলাম। তিনি নামায থেকে ফিরলেই আমি তাঁর হাত ধরে জিজ্ঞেস করলাম। আপনি কি জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এটাই তো নিয়ম এবং সঠিক। (হা: নং নাসায়ী- ১৯৯০, তিরমিজী- ১৬৬) হযরত আবু আমামা ইবনে সাহাল (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁকে রাসূল (দ্বঃ)- এর একজন ছাহাবী জানিয়ে দিয়েছেন: أن السُّنَّةَ فِي الصَّلوةِ عَلَى الْجَنَازَةِ أَنْ يُكَبِّرَ الإِمَامُ ثُمَّ يَقْرَأ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ بَعْدَ التَّكْبِيرَةِ الأُولَى سِرًّا فِي نَفْسِهِ ثُمَّ يُصَلَّى على النبي ﷺ وَيَخْلُصُ الدُّعَاءَ للجنازة في التكبيرات ولا يَقْراً فِي شَيْ مِنْهُنَّ ثُمَّ يُسَلِّمُ سِرًّا فِي نَفْسِهِ জানাযার নামাযের নিয়ম হলো: ইমাম তাকবীর বলবে অতঃপর এ প্রথম তাকবীরের পর নিঃশব্দে সূরা: ফাতিহা পড়বে। এরপর (দ্বিতীয় তাকবীর বলার পর) নবী (ছুঃ)-এর উপর দুরূদ পড়বে, (এর পরবর্তী তাকবীর বলার পর) মৃতের জন্য খালেছুভাবে দু’আ পড়বে এবং তার (তারপরবর্তী তাকবীরের পর) পর অন্য কিছু পড়বে না বরং নিঃশব্দে [এক দিকে (ডানে)] সালাম ফিরাবে। (নাসায়ী, মুসনাদে শাফি’য়ী) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: أنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ فَكَبِّرَ عَلَيْهَا أَرْبَعًا وَسَلَّمَ تسليمة واحدة রাসূলুল্লাহ (দ্বঃ) জানাযার নামায চার তাকবীরে আদায় করলেন এবং শুধু এক দিকে সালাম ফিরালেন। (দ্যরাকৃতনী- ১৯১, হাকেম, ৩৬০) এ ছাড়া হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে ছুহীহ সূত্রে সাব্যস্ত হয়েছে যে, “হযরত আলী ইবনে আবী তালেব, আবদুল্লাহ ইবনে উমর, আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ ইবনে আবী আউফা (রাঃ) তাঁরা সবাই জানাযার নামযে একদিকে এক সালামই ফিরাতেন।” (আহকামুল জানাইয- আলবানী) উপরে বর্ণিত হাদীছ অনুযায়ী জানাযার নামায পড়ার সঠিক নিয়ম হলো- মনে মনে নিয়্যত করে জানাযার নামাযের জন্য দাঁড়ানোর পর প্রথম তাকবীর বলে (ছানা না পড়ে) ‘সূরা ফাতিহা’ পড়া, তারপর দ্বিতীয় তাকবীর বলে দুরূদ (দুরূদে ইবরাহীমী) পড়া, তারপর তৃতীয় তাকবীর বলে (জানাযার নামাযে পড়ার) দু’আ পড়া, অতঃপর চতুর্থ তাকবীর বলে শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা। আগের পাতা: ০৪ | পরবর্তী পাতা: ০৬ […]
[…] আগের পাতা: ০৬ | পরবর্তী পাতা: ০৮ […]