চট্টগ্রামে দুই সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করলেন বৃদ্ধা মা

0 1,521

নিজস্ব প্রতিবেদন:
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ৬২ বছর বয়সী ছেনোয়ারা বেগম ফৌজদারী আদালতে মামলা করলেন তার দুই ছেলে সন্তান তাদের স্ত্রী ও নাতির বিরুদ্ধে। ৩নং ওয়ার্ড পূর্ব দেওয়ান নগর হাজী নুরুল আলম সওদাগর বাড়ীর এই বৃদ্ধার অভিযোগ তার বড় ছেলে লোকমান (৪৫) ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৩৫), ৩য় ছেলে মোজাম্মেল (৩৮) ও তার স্ত্রী মাসুদা বেগম মনি (২৭) এবং নাতি রাফি (লোকমানের ছেলে) মিলে প্রায়ই তাকে শারীরিক নির্যাতন করতো। বিভিন্ন সময় ওরা নিজেদের নামে সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়। মামলা (সি.আর মামলা নং: ৩৬৬/২০২১ – হাটহাজারী) সূত্রে জানা যায় গত ১৭-মে, ২০২১ তারিখ বেলা আনুমানিক ১২:৩০ টার দিকে বড় ছেলে লোকমান ও ৩য় ছেলে মোজাম্মেল সম্পত্তি দান করে দেয়ার জন্য তাদের মায়ের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। কিন্তু মা ছেনোয়ারা বেগম জানান তিনি তার স্বামীকে কোন দান পত্র করতে দেবেন না। তোদের বাবা মারা গেলে তোরা সম্পত্তির ভাগ পাবি। এসময় বড় ছেলে লোকমান তার মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে কিল ঘুষি মারে। এবং বাদীনি চিৎকার করলে তাকে গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় ৩য় ছেলে সহ তাদের স্ত্রীরাও যুক্ত হয় বড় ছেলে লোকমানের সাথে। মামলার বর্ণনা মতে এসময় বাদীনির নাতি রাফি (২০) ঘরে থাকা গরু জবাই করার কিরিচ নিয়ে এসে হুমকি দিতে থাকে। এসময় লোকমানের স্ত্রী রেহেনা বেগম বাদীনির গলায় থাকা একটি ১০ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিড়ে নিয়ে ফেলে। ঘটনাস্থলে বাদীনির মেয়ে আরেফা খাতুন (৩০) উপস্থিত হয়ে মাকে বাচাতে চাইলে তাকেও আহত করে। এর পর বাদীনির ছোট ছেলে মামুন এসে আহত মা ও বোনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে রাফি (২০) কিরিচ হাতে পথরোধ করে বাধা দেয়। ২৫ মিনিট পর মামুন তার আহত মা ও বোনকে সেখান থেকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

বাদী পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফার সাথে কথা বলে জানা যায়, আদালত প্রথমে দুই ছেলের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে এবং তাদের দুজনের স্ত্রীর প্রতি সমন জারি করে। গত ০৬-জুন ২০২১ ইং তারিখে তারা আত্মসমর্পন করে। এর পর আদালত বড় ছেলে লোকমানকে হাজতে পাঠায়, মানসিক রোগে আক্রান্ত বলে ৩য় ছেলে মোজাম্মেলকে জামিন দেন। এর পর লোকমানের জামিনের জন্য পুনরায় আদালতে আবেদন করলেও আদালত তা খারিজ করে দেয়। আগামী আগস্টে পুনরায় সমন ফেরতের জন্য অন্য আসামীদের পুনরায় কোর্টে ডাকা হবে বলে জানান বাদী পক্ষের আইনজীবি।

- Advertisement -

এ বিষয়ে বিবাদীদের সাথে কথা বললে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবী করেন। বিবাদী মোজাম্মেলের সাথে কথা বললে তিনি জানান তারা কেউ তাদের মায়ের সাথে দূর্ব্যবহার করেনি। তাদের মা অন্য সন্তানদের প্ররোচনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মোজাম্মেল জানান তার কাজ করে পরিবার চালানোর মতো সক্ষমতা নেই। এখন সে পরিবার নিয়ে কষ্টে আছে। মোজাম্মেলের স্ত্রী জানান তাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করেন তার শাশুরী। তিনি জানান তার বিয়ের সময় তার শশুর তাকে আলাদা করে ২ গন্ডা জায়গা দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। তাই তিনি এই অসুস্থ মোজাম্মেলকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছিলেন। এছাড়া তাদের সকল ব্যবসা দেখাশুনা করতেন তার শশুর। তিনি প্রতি মাসে মোজাম্মেলের খরচের টাকা দিতেন। কিন্তু বর্তমানে তার শশুর নিজেই বার্ধক্যজনিত কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। ব্যবসা দেখাশুনা করছেন ২য় ছেলে। তারা এখন আর মোজাম্মেলকে খরচ দিতে চায়না। তাই তিনি তার দুই সন্তান সহ পরিবারের খরচ চালাতে পারছেননা। এমতাবস্থায় তাদের সম্পত্তি বন্টন করে দিলে তারা আলাদা করে নিজের ব্যবস্থা করে নিতে পারতো। এক পর্যায়ে তিনি আর এই সংসার করবেননা বলেও জানান। এবং তার মোহরানার টাকা বুঝিয়ে দেয়ার দাবী জানান।

উল্যেখ্য বড় ছেলে লোকমান আগে থেকেই আলাদা থাকেন। লোকমানের ছেলে রাফি(২০) জানায় সে এস.এস.সি পরীক্ষার্থী, তারা কখনো দাদা-দাদীর সাথে দূর্ব্যবহার করেনি। তার বাবাকে ফাঁসানো হয়েছে। এসময় বিরোধটি পারিবারিক ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করবেন কিনা জানতে চাইলে তারা জানায়, আমরা প্রয়োজনে ক্ষমা চাইবো। কিন্তু ওনারা কোথায় আমরা জানিনা। তবে তারা এটাও দাবী করেছে অন্য ছেলে মেয়েরা নিজেদের স্বার্থে তাদের বাবা-মাকে তাদের সাথে রেখেছে। সম্পত্তি বন্টনের বিষয়ে যে আইন আছে সে আইন অনুযায়ী তাদের সকল সম্পত্তি থেকে সকল ভাই ও বোনদের অধিকার অনুযায়ী সম্পত্তি বন্টনের ব্যপারে তাদের কোন আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে তারা জানায় এতে তাদের কোন আপত্তি নাই। বিবাদী ছেনোয়ারা বেগমের কাছে তার সন্তান ও তাদের স্ত্রী সন্তানগন ক্ষমা চাইলে তাদের মাফ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, যদি তারা তাদের বৃদ্ধ ও অচল বাবার সেবা করতে পারে এবং আমার অবাধ্য না হয় তবে আমি ক্ষমা করতে পারি।

মামলার বিষয়ে বিবাদীর আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বিবাদীগনের সহায়তা চাইলেও তারা কোন সহায়তা করেননি।

- Advertisement -

Comments
Loading...